Header Ads

Header ADS

কেন কাশ্মীরী ফাইবার এতো বিলাসবহুল !!

আমাদের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে প্রকৃতি প্রদত্ত যত গুলো প্রোটিন ফাইবার আছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে  কাশ্মীরী ফাইবার, যা বিলাসবহুলও বটে। এই ফাইবার টি প্রায় সিল্কের ন্যায় যা এই ফাইবার গুলোর ফাইননেস বা প্রস্থচ্ছেদের সূক্ষ্মতা দিয়ে অনেক সহজেই চিহ্নিত করা যায়। এটিকে সবচেয়ে বিলাসবহুল ফাইবারগুলির মাঝে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কেননা বিশুদ্ধ কাশ্মীরী, এর উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে খুবই ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে, ছাগলের গায়ের লোম হতে ফাইবারগুলো হ্যান্ড-মেইড প্রক্রিয়ায় আলাদা করা হয়ে থাকে।

কাশ্মীরী কি: 

কাশ্মীরী হল এক ধরনের উল যা কাশ্মীরী ছাগল এবং পশমিনা ছাগল থেকে উৎপাদন করা হয়। “কাশ্মীরী” শব্দটি “কাশ্মীর” নামেও পরিচিত, যা উত্তর ভারতের একটি অঞ্চল এবং সেখানে এখনও কাশ্মীরী ফাইবার তৈরি করা হয়ে থাকে। কাশ্মীরী ফাইবার অত্যন্ত নরম এবং অন্তরক গুণ বিশিষ্ট (শীতের সময়ে উষ্ণতা বজায় রাখতে সক্ষম) একটি প্রাকৃতিক ফাইবার। এই ফাইবারগুলো বেশ কোমল এবং সূক্ষ্ম হয়ে থাকে। কাশ্মীরী ফাইবারগুলো অত্যন্ত উষ্ণ এবং হালকা হয় যা কিছুটা “অ্যাঙ্গোরা” জাতের ছাগল থেকে তৈরি। কাশ্মীরী ফাইবারগুলি সূক্ষ্ম এবং পাতলা হওয়ার কারণে এর ওজন বৃদ্ধির জন্য প্রায়শই মেরিনোর মতো বিভিন্ন ধরণের উলের সাথে একে মিশ্রিত করা হয়।

উৎস: 

কাশ্মীরী ফাইবার, কাশ্মীরী ছাগল এবং পশমিনা ছাগলের লোম থেকে সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত ছাগলের গায়ের নীচের অংশ থেকে বা ঘাড়ের অংশ থেকে এই লোমগুলো কাটা হয়। মূলত শীত মৌসুমে ছাগলগুলো, নিজেকে উষ্ণ রাখার প্রয়োজন বেশি হয়, যার ফলে শীতকালেই কাশ্মীরী ফাইবারগুলো ভালো ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। কাশ্মীরী ছাগল থেকে দুই ধরণের কোট তৈরি হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ আবরণ যা বেশ নরম হয়ে থাকে এবং অপরটি হচ্ছে বহিঃস্থ আবরণ; এটি বেশ রুক্ষ প্রকৃতির হয়ে থাকে। এই অভ্যন্তরীণ আবরণই পরবর্তীতে কাশ্মীরী ফাইবারে রূপান্তরিত করা হয়। কাশ্মীরী ছাগল মোটামটিভাবে সারা বিশ্বেই বাস করে। তবে চীন, মঙ্গোলিয়া এবং ইরানের তাপমাত্রা এদের জন্য উপযোগী হওয়ায় এদের একটি বিশাল প্রজাতি উক্ত অঞ্চলগুলোতে দেখা যায়।

উৎপাদন প্রক্রিয়া: 

কাশ্মীরী ফাইবার, এর উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে, একটি বিলাসবহুল ফাইবার হিসাবে পরিগণিত। এর উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো: 

১) সাধারণত বসন্তের মৌসুমে এই ফাইবারগুলো সংগ্রহ করতে হয়। এগুলোকে একটি চিরুনির সাহায্যে কম্বিং পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা যেতে পারে, যার ফলে ফাইবারগুলো সাধারণত চিকন হয়ে থাকে। এছাড়াও, এই ফাইবারগুলো কেটেও সংগ্রহ করা যেতে পারে। কিন্তু এর ফলে অনেক বেশি রুক্ষ আবরণের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে যা ডি-হেয়ারিং (অতিরিক্ত ফাইবার আলাদা-করন) করার প্রয়োজন হয়। 

২) বেশিরভাগ কাশ্মীরী ফাইবার কম্বিং প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়। কারণ, এর ফলে উচ্চ-মানের ফাইবার উৎপন্ন হয়ে থাকে। কেটে যেই ফাইবারগুলো সংগ্রহ করা হয় তা প্রায়ই নিম্নমানের হয়ে থাকে। কারণ কম্বিং প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন ফাইবারের চেয়ে এগুলো অনেক খাটো হয়ে থাকে। যার ফলে এগুলোকে পিলিং করার প্রয়োজন হয়। 

৩) ফাইবারগুলো সংগ্রহ করার পর, কোর্সার (মোটা) ফাইবারগুলিকে ফাইন (চিকন) ফাইবার হতে আলাদা করতে হবে, যা পরবর্তীতে কাশ্মীরী ফাইবারে পরিণত হয়। 

৪) ফাইবারগুলি আলাদা করা হয়ে গেলে, সেগুলোকে সুতোর বেলের মাঝে একত্রিত করা হয়। যা পরে ডাইং করে নিট বা ওভেন ফেব্রিক তৈরি করা হয়।

ব্যবহার: 

যেহেতু কাশ্মীরী ফাইবার বেশ কোমল এবং অন্তরক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, তাই কাশ্মীরী ফাইবারের তৈরি পণ্য যেমন, শীতের পোশাক এবং আনুষাঙ্গিক জিনিস-পত্র বেশ জনপ্রিয়।

পরিধেয়-বস্ত্র: 

কাশ্মীরী উল দ্বারা তৈরী পোশাক ওভেন এবং নিটেড উভয় ধরণের হতে পারে। কাশ্মীরী সোয়েটার যেমন: কাশ্মীরী কার্ডিগান বা পুলওভার থেকে শুরু করে ক্রুনেক বা ভি-নেক সোয়েটার—খুবই জনপ্রিয় আইটেম। তবে কাশ্মীরী কোট, প্যান্ট এবং অন্যান্য আইটেমও এগুলোর পাশাপাশি একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। 

জিনিস-পত্র: 

কাশ্মীরের তৈরি কিছু অন্যান্য জিনিস-পত্র, যেমন কাশ্মীরী শাল, গ্লাভস, মোজা এবং স্কার্ফ, অত্যন্ত জনপ্রিয় কাশ্মীরী আইটেম। এর প্রধান কারণ হলো, এগুলো বেশ উষ্ণ এবং যে কোনো পোশাকের সাথে একটি জাঁকজমকপূর্ণ শৈলীর সৃষ্টি করে থাকে।

গৃহস্থালি পণ্য: 

কাশ্মীরী কম্বল খুব উষ্ণ এবং বিলাসবহুল। যা পালঙ্ক, চেয়ার বা বিছানায় সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কাশ্মীরী পণ্য ব্যবহারে সতর্কতা: 

কাশ্মীর ফাইবারগুলো খুব সূক্ষ্ম এবং উচ্চ অন্তরক গুণসম্পন্ন হওয়ায় কাশ্মীরী পোশাক বা পণ্যগুলো খুব সাবধানে পরিস্কার করা উচিত। এক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে:- 

১. বাড়িতে ঠাণ্ডা জল দিয়ে কাশ্মীরী পোশাক বা পণ্যটি হাত দিয়ে ধুতে হবে। ওয়াশিং মেশিন এক্ষেত্রে ব্যবহার না করাই শ্রেয়। 

২. এতে সব রকমের সাবান প্রয়োগ করা যায় না। তাছাড়া কাশ্মীরী আইটেমগুলির জন্য এক ধরণের বিশেষ ডিটারজেন্টও রয়েছে, যা ব্যবহার করেও ধৌত কাজ সম্পন্ন করা যেতে পারে। 

৩. হাত দিয়ে ধোয়ার সময়, পোশাকটি ঠান্ডা জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং কিছুক্ষন পর স্কুইজ করে অতিরিক্ত জল অপসারণ করতে হবে। কুচকানো থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। কারণ এর ফলে পোশাকের আকার প্রসারিত হয়ে যেতে পারে কিংবা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

৪. অতিরিক্ত জল অপসারণ করা হয়ে গেলে, কাশ্মীরী আইটেমটি শুকানোর জন্য ড্রায়ার ব্যাবহার করলে ভালো হয়। কেন না, এই ফাইবার দিয়ে বানানো পোশাক, ঝুলিয়ে শুকাতে গেলে, পোশাকের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের পরিবর্তন হয়ে যায়। যার কারনে পোশাকের অরিজিনাল শেইপ নস্ট হয়ে পড়ে।  

লিখাটি ক্রোনিক্যালস অফ টেক্সটাইল এর নিজস্ব। লিখাটি কপি করা থেকে বিরত থাকুন।

Writer Information: 

Name:  Rafidul Amin Soeb
Institute: Primeasia University
Batch:  201
Contact: 01854501395
Email:  rafidulsoeb@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.